রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ পূর্বাহ্ন
বরগুনা প্রতিনিধি : বরগুনা, ২ ফেব্রুয়ারী \ এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী শামীম আহমদকে মাদকাসক্ত ও চাঁদাবাজ বলে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্তৃপক্ষ শামীম আহমদের যে মানহানিকর নোটিশ দিয়েছে সেই নোটিশের ভিত্তিতে পাথরঘাটা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিশ্ববিদ্যালয়টির মালিক সাদেকসহ সাত জনার নামে মামলা হয়েছে।
মামলা নং সি আর ৩৫/২১/ ফেব্রুয়ারীর ২ তারিখ মঙ্গলবার বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)কে তদন্তের দ্বায়িত্ব দিয়েছে। মামলার আইনজীবী মোস্তফা কাদের বলেন তার মক্কেল শামীম আহমদ বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত রাজনৈতিক লেখক এবং সাংবাদিক। তিনি বিষয়ভিত্তিক আরো বেশী একাডেমিক জ্ঞান চর্চার লক্ষ্যে ২০১৮ সালে ঢাকার আশুলিয়াস্থ এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের সরকার ও রাজনীতি বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। ভর্তির পরেই শামীম আহমদের বই “শেখ হাসিনা ও ঘুরে দাঁড়ানো বাংলাদেশ” নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির সরকার ও রাজনীতি বিভাগ ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই বইয়ের ওপর সেমিনার করে। তখন ভিসি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল পর্যায়ের শিক্ষকরা শামীম আহমদের ভুয়সী প্রশংসা করছেন। সেমিনারের কয়েক মাস পরে বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসি সাদেক সাহেবের পিএসকে দেওয়া হয় সরকার ও রাজনীতি বিভাগের চেয়ারম্যানের দ্বায়িত্ব।
পিএস আনিছুর রহমান ছিলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিবিরের ক্যাডার। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের একটি পর্যায়ে এসে জুন ২০২০ তারিখ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টি জুম অ্যাপসভিত্তিক ক্লাস ও পরীক্ষা নেওয়া শুরু করে। তখন একটি সেমিস্টারে ভাইবা শেষে শামীম আহমদকে দুটি সাবজেক্টে ফেল করানোর কথা বলেন বিভাগের নতুন চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান। শামীম আহমদ তার বিভাগীয় চেয়ারম্যানের কথপোকথন মোবাইল ফোনে রেকর্ড করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে পাঠিয়ে চিঠি দিয়ে জানতে চান পরীক্ষার ফল প্রকাশের পূর্বে কোন শিক্ষক তার ছাত্রকে ফেল করানোর কথা বলতে পারে কিনা। যা পরীক্ষার নীতিমালা পরিপন্থী। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা ২০১০ অনুযায়ী আনিছুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার যোগ্য নয় এমন অভিযোগ রয়েছে। তাকে এই বিভাগে চেয়ারম্যান করে রাখলে শামীম আহমদ ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বেন না বলেও তিনি ভিসিকে সেই চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছেন। এরপরেই বিভাগের চেয়ারম্যান শিবির ক্যাডার আনিছুর রহমানের সাথে শামীম আহমেদের বিরোধ শুরু হয়। শামীম আহমদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর বই লিখেন তাই একজন শিবির ক্যাডার অধীনে পড়তে চাননি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসিকে চিঠি দিয়ে আনিছুর রহমানকে ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরিয়ে দিতে অনুরোধ করছেন। ক্লাসের নাম দিয়ে বিডিরেন জুম অ্যাপস ব্যবহার করে অযাচিত কিছু ওয়েবিনার আয়োজন করে সরকার বিরোধী তৎপরতা চালান এই শিবির ক্যাডার আনিছুর রহমান। কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই হঠাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ইমিরেটাস উপাধি ব্যবহার শুরু করেন। কেন এমন উপাধি ব্যবহার করেন তা জানতে চেয়ে শামীম আহমদ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যানের নিকট চিঠি দিয়েছিলেন। এতেই আনুষ্ঠানিক রূপ পায় শামীম আহমদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিক পক্ষের বৈরীতা। ২০২১ সালের ৩ জানুয়ারী বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন বিশ্ববিদ্যালয়টির অনিয়ম ও সীমাহীন দুর্নীতির একটি প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয় পাঠায়।
সেই প্রতিবেদন ও বিশ্ববিদ্যালয়টির একজনের আবেদনের প্রেক্ষিতে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ বিশ্ববিদ্যালয়টির দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত শুরু করে। যখন সেই তদন্তের খবর শামীম আহমদ সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ করেন তখনই সেই সংবাদ প্রকাশের জেরে বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্তৃপক্ষ শামীম আহমদকে সাময়িক বহিষ্কার করে ১৭ জানুয়ারী ২০২১ তারিখে চিঠি দেয়। পরে শামীম আহমদের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোক্টর মোবারক হোসেন এবং তার বিভাগের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান পৃথকভাবে দু’টি মিথ্যা মামলা করেন। এই সংবাদ প্রচারের কারনে বহু লোকজন শামীম আহমদকে হত্যার হুমকি দিয়েছে। শুরু করছে তাকে নিয়ে নানান ষড়যন্ত্র। বিশ্ববিদ্যালয়টির অবৈধ ভিসি কিভাবে “ইমিরেটাস” উপাধি ব্যবহার করেন তা জানতে চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যানকে দেয়া শামীম আহমদ সেই চিঠি বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে গেলে বেরিয়ে আসে ভিসি সাদেকের “ইমিরেটাস” উপাধি ভুয়া। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এই মামলার আসামীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ফারুক আহমদ ছাড়াও সরকার ও রাজনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি আবুল হাসান মুহাম্মদ সাদেক, ট্রাস্টি বোর্ড চেয়ারম্যান জাফর সাদেক, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোবারক হোসেন, ছাত্র কল্যাণ পরিচালক আনভীর মুহাম্মদ আল শামস এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড সদস্য ইয়াসিন আলীকে আসামী করা হয়েছে।